চিকন হওয়ার জন্য কী খেতে হবে: সহজ গাইডলাইন

চিকন হতে হলে পুষ্টিকর কিন্তু কম ক্যালরিযুক্ত খাবার খেতে হবে। যেমন, সবুজ শাকসবজি, সাদা মাংস (মুরগির বুকের মাংস), মসুর ডাল, বাদাম, এবং তাজা ফল। খাবারে ফাইবার এবং প্রোটিনের পরিমাণ বাড়াতে হবে যাতে পেট ভরা থাকে, কিন্তু অতিরিক্ত ক্যালরি না আসে।

এই আর্টিকেলে চিকন হওয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো: ওজন কমাতে প্রশ্ন আসে ডায়েট

চিকন হওয়ার জন্য কী খেতে হবে
চিকন হওয়ার জন্য কী খেতে হবে

কিভাবে ডায়েট শুরু করব?

ডায়েট শুরু করার আগে আপনাকে 4টি ধাপ অনুসরণ করা উচিত:

  • ডায়েট পরিকল্পনা: সঠিকভাবে একটি খাদ্য তালিকা তৈরি করতে হবে, যেখানে কম ক্যালরি এবং বেশি পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার থাকবে। এটার জন্য পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করলে ভালো হয়।
  • ক্যালরি নিয়ন্ত্রণ: ওজন কমাতে হলে দৈনিক ক্যালরি গ্রহণের পরিমাণ কমাতে হবে। সাধারণত, আপনার মেটাবলিজমের উপর ভিত্তি করে দিনে ৫০০-১০০০ ক্যালরি কমানো যেতে পারে।
  • ছোট পরিমাণে খাওয়া: বারবার অল্প করে খাবার খেলে ক্যালরি কমে এবং মেটাবলিজম বাড়ে। তাই দিনে ৫-৬ বার অল্প পরিমাণে খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
  • নিয়মিত পানি পান: পানি ওজন কমাতে অত্যন্ত সহায়ক। দিনে অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি পান করলে মেটাবলিজম বাড়ে এবং শরীরে টক্সিন বের হয়।

দিনে কত ক্যালরি খাওয়া উচিত?

একজন ব্যক্তির দিনে কত ক্যালরি খাওয়া উচিত তা নির্ভর করে তার বয়স, লিঙ্গ, দৈহিক কার্যক্রম এবং ওজন কমানোর লক্ষ্যের উপর। সাধারণভাবে, একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দৈনিক প্রায় ২০০০-২৫০০ ক্যালরি এবং একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর ১৮০০-২২০০ ক্যালরি প্রয়োজন। তবে, ওজন কমানোর জন্য ক্যালরি গ্রহণ কমাতে হবে এবং এর সঙ্গে ব্যায়াম যোগ করতে হবে।

দৈনিক ক্যালরি নির্ধারণ করে একজন ব্যক্তির শারীরিক বিশ্রামের সময় কত ক্যালরি পোড়ে। এর সঙ্গে দৈহিক কার্যক্রম যোগ করে মোট ক্যালরি প্রয়োজন নির্ধারণ করা হয়।

স্বাস্থ্য ক্যালকুলেটর

স্বাস্থ্য ক্যালকুলেটরের সাহায্যে লিঙ্গ, উচ্চতা, বর্তমান ওজন এবং পরিশ্রমের ধারণা উপর নির্ধারণ করে সহজেই  আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে পারেন।  ক্যালকুলেটের সাহায্যে যা তথ্য পাবেন

  • আপনার বর্তমান স্বাস্থ্য তথ্য: বর্তমান ওজন, স্বাভাবিক ওজন, আদর্শ ওজন, BMI, ফ্যাট ইত্যাদি সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন
  • BMI অনুযায়ী আপনার অবস্থান:  বিএমআই অনুযায়ী আপনার অবস্থান কোথায় তার নির্ধারণ করতে পারবেন
  • ক্যালরির প্রয়োজনীয়তা: বর্তমানে ওজন ধরে রাখতে অথবা ওজন কমাতে বা বাড়াতে আপনার কত ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে ? এ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পাবেন

১ মাসে কত কেজি ওজন কমানো সম্ভব?

একজন সুস্থ ব্যক্তির জন্য ১ মাসে ২-৪ কেজি ওজন কমানো সম্ভব এবং এটি স্বাস্থ্যসম্মতও। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি সপ্তাহে ০.৫ থেকে ১ কেজি ওজন কমানো স্বাভাবিক এবং নিরাপদ। এর জন্য প্রায় ৩৫০০ ক্যালরি বার্ন করতে হবে, যা প্রতিদিন ৫০০-৭০০ ক্যালরি কমিয়ে অর্জন করা যায়।

২০ কেজি ওজন কমানোর ডায়েট চার্ট

ওজন কমানোর জন্য একটি বাস্তবসম্মত লক্ষ্য নির্ধারণ করা জরুরি, কারণ দ্রুত ওজন কমানোর চেষ্টায় শরীর দুর্বল হয়ে যেতে পারে। এছাড়াও দ্রুত ওজন কমালে অনেক সময় তা পুনরায় বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই, সঠিকভাবে পরিকল্পিত ডায়েট এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে ধীরে ধীরে ওজন কমানো ভালো।

পেটের চর্বি কমানোর জন্য কোন খাবারগুলো উপকারী?

পেটের চর্বি কমানোর জন্য কিছু বিশেষ ধরনের খাবার খুবই উপকারী হতে পারে। যেমন:

ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার: ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারগুলো পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং চর্বি জমতে দেয় না। যেমন:পালং শাক, ব্রকলি, বাঁধাকপি, ওটস, ব্রাউন রাইস, চিয়া সিড ইত্যাদি

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিন পেশী তৈরি করে এবং চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে:মুরগির মাংস, মাছ, ডিমের সাদা অংশ, লেন্স এবং মসুর ডাল ইত্যাদি। এ সম্পর্কে আরো বেশি বিস্তারিত জানতে পেটের চর্বি কমানোর উপায়: গবেষণায় কার্যকর পদ্ধতি

দ্রুত ওজন কমানোর জন্য কি খাবার খাওয়া উচিত?

দ্রুত ওজন কমাতে হলে সঠিকভাবে পরিকল্পিত খাদ্যতালিকা অনুসরণ করা জরুরি। কম ক্যালরি, প্রোটিন এবং ফাইবারসমৃদ্ধ খাবারগুলো দ্রুত ওজন কমানোর জন্য উপযুক্ত। কয়েকটি দ্রুত ওজন কমানোর খাবার হলো: চিকেন ব্রেস্ট, মাছ: স্যালমন, টুনা, সার্ডিনের মতো মাছ খেলে ওজন কমাতে সাহায্য হয়। 

এছাড়াও কম ফ্যাটযুক্ত এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ এই খাবার দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক। পালং শাক, ব্রোকলি, বাঁধাকপি, ওজন কমানোর জন্য কার্যকর। এগুলো ফাইবার এবং ভিটামিনে সমৃদ্ধ যা শরীরকে পুষ্টি যোগানোর পাশাপাশি ক্যালরি বার্ন করতে সহায়ক। এছাড়াও আপনার সঠিক ওজন জানতে উচ্চতা অনুযায়ী ওজন চার্ট দেখুন

রাতে ওজন কমানোর জন্য কি খাওয়া ভালো?

রাতে কম ক্যালরি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খেলে ওজন কমাতে সহায়ক হয়। খাবার আগে  এক গ্লাস পানি পান করুন এবং রাতে হালকা খাবার গ্রহণ করুন যাতে হজম সহজ হয় এবং শরীর পর্যাপ্ত বিশ্রাম পায়। কিছু উপকারী খাবার হলো:

  • সবজি স্যুপ: হালকা এবং ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি স্যুপ খেলে শরীর পর্যাপ্ত পুষ্টি পায় এবং রাতের ক্ষুধা কমায়।
  • গ্রিলড ফিশ বা চিকেন: রাতের খাবারে প্রোটিন সমৃদ্ধ মাছ বা চিকেন খেলে ওজন কমাতে সহায়ক। এগুলো হালকা এবং হজমে সহজ।
  • দই: রাতে কম চর্বিযুক্ত দই খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। এটি হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং ঘুমের সময় শরীরকে সঠিক পুষ্টি দেয়।
  • ভেজিটেবল স্যালাড: টমেটো, শসা, গাজর, ব্রকলি, এবং লেটুস সমৃদ্ধ স্যালাড হালকা এবং ওজন কমানোর জন্য ভালো খাবার।

কি সবজি ওজন কমাতে সহায়ক?

ওজন কমাতে সহায়ক সবজিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোই ফাইবারে ভরপুর এবং কম ক্যালরিযুক্ত। এসব সবজি বেশি খেলে শরীর পুষ্টি পায় এবং ওজন কমানোর প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয়। কিছু উপকারী সবজি হলো:

  • পালং শাক: প্রচুর ফাইবার রয়েছে, যা দীর্ঘ সময় ক্ষুধা কমিয়ে রাখে এবং ক্যালরি কমাতে সহায়তা করে।
  • শশা: শশা পানি এবং ফাইবার সমৃদ্ধ, যা শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে এবং হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে।
  • গাজর: গাজর কম ক্যালরিযুক্ত এবং ফাইবারসমৃদ্ধ, যা পেট ভরা রাখতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি খাওয়ার প্রবণতা কমায়।
  • লাউ: লাউতে খুব কম ক্যালরি থাকে, তবে পুষ্টিতে পরিপূর্ণ। এটি ওজন কমাতে খুবই উপকারী।

ওজন কমানোর জন্য কি ফল খাওয়া উচিত?

ওজন কমাতে কিছু ফল খুবই উপকারী কারণ এদের মধ্যে কম ক্যালরি এবং বেশি ফাইবার থাকে। এ ধরনের ফল খেলে ক্ষুধা কম থাকে এবং শরীরের চর্বি দ্রুত কমে। কিছু উপকারী ফল হলো:

  • আপেল: আপেল ফাইবারসমৃদ্ধ, যা ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ফ্যাট বার্নিং প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
  • বেরি: ব্লুবেরি, স্ট্রবেরি এবং রাসবেরির মতো বেরি অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর এবং কম ক্যালরি।
  • কমলা: কমলালেবুতে ক্যালরি কম এবং ফাইবার বেশি, যা পেট ভরা রাখে এবং দ্রুত ক্ষুধা লাগতে বাধা দেয়।
  • পেয়ারা: পেয়ারা ভিটামিন সি এবং ফাইবারে সমৃদ্ধ, যা ওজন কমাতে সহায়ক।
  • আনারস: আনারসের ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ওজন কমানোর জন্য খুব উপকারী।

ওজন কমানোর জন্য কি খাবারগুলো এড়িয়ে চলা উচিত?

ওজন কমাতে চাইলে কয়েকটি খাবার এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এসব খাবারে বেশি ক্যালরি এবং প্রক্রিয়াজাত চর্বি থাকে। এগুলো ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং শরীরের চর্বি জমাতে পারে। এড়িয়ে চলা উচিত কিছু খাবার:

  • প্রক্রিয়াজাত খাবার: ফাস্ট ফুড, প্যাকেটজাত খাবার, এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস।
  • চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার: ক্যান্ডি, কুকিজ, কেক, সফট ড্রিঙ্ক ইত্যাদি অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার।
  • তেলে ভাজা খাবার: ভাজা খাবার যেমন সিঙ্গারা, সমুচা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ইত্যাদি ওজন বাড়ায়।
  • সাদা চাল ও ময়দা: এসব শস্য প্রক্রিয়াজাত হয়ে ক্যালরি বাড়ায় এবং ফাইবারের অভাব ঘটায়।
  • মিষ্টি পানীয়: সফট ড্রিঙ্ক, মিষ্টি চা, জুস, এনার্জি ড্রিঙ্ক ইত্যাদি খেলে শরীরে বাড়তি ক্যালরি জমা হয়।

ওজন কমাতে কোন ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর?

ওজন কমানোর জন্য কার্যকর ব্যায়ামগুলো এমন ধরনের হওয়া উচিত, যা শরীরের বড় বড় পেশী গোষ্ঠীকে সক্রিয় করে এবং উচ্চমাত্রার ক্যালরি পোড়ায়। কিছু জনপ্রিয় এবং কার্যকর ব্যায়াম হলো:

  • কার্ডিও: দৌড়ানো, সাইকেল চালানো, জগিং, সাঁতার কাটা ইত্যাদি কার্ডিওভাসকুলার ব্যায়াম উচ্চমাত্রার ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে। কার্ডিও ব্যায়াম হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের ফ্যাট দ্রুত হ্রাস করে।
  • হাই ইন্টেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং (HIIT): এই ব্যায়ামে দ্রুত এবং তীব্র ব্যায়ামের সঙ্গে কম তীব্রতার বিশ্রামের সময় দেওয়া হয়। HIIT শরীরের মেটাবলিজম বাড়িয়ে দেয় এবং শরীরের ফ্যাট পোড়াতে সহায়ক হয়।
  • প্ল্যাঙ্ক এবং বডি ওয়েট ট্রেনিং: প্ল্যাঙ্ক, পুশ-আপ, স্কোয়াট, এবং লাঙের মতো বডি ওয়েট ট্রেনিং ওজন কমানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকর। এই ব্যায়ামগুলো পেশী গঠনে সহায়ক এবং ক্যালরি পোড়ানোর হার বাড়ায়।
  • যোগব্যায়াম: যোগব্যায়াম ধীরে ধীরে ওজন কমানোর একটি চমৎকার উপায়। যোগা দেহের স্থিতিশীলতা এবং নমনীয়তা বাড়ায়, যা শরীরের মেদ কমাতে সহায়তা করে।
  • ওজন উত্তোলন: জিমে বা বাড়িতে ওজন উত্তোলন বা রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং পেশীর শক্তি বাড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদে ওজন কমাতে সহায়ক। এই ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীর ফ্যাটের পরিবর্তে পেশীতে রূপান্তরিত হয়।